রাজ্য

দেবজিৎ সরকার, দুধকুমার মন্ডল বিজেপি রাজ্য কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া

কয়েকদিন আগে বিজেপির রাজ্য কমিটি গঠন হয়েছে। আর এই রাজ্য কমিটি গঠনের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিজেপির একটি বড় অংশের কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে শুরু হয়েছে খোলাখুলি সমালোচনা। দীর্ঘদিনের লড়াকু বিজেপি নেতা দুধ কুমার মন্ডল, আইনজীবী দেবজিৎ সরকার রাজ্য কমিটিতে স্থান পাননি। অনেকেই মনে করেছিলেন এই দুজনকে এবার রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তুলনা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে এই দুজনের স্থানই হলোনা। দেবজিৎ সরকার রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি ছিলেন স্বাভাবিকভাবেই তিনি মূল সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সে সব কিছুই হয়নি। জি সি মন্ডল নাম দিয়ে এক ব্যক্তি রাজ্য কমিটি গঠনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া তিনি যা লিখছেন সেটাই বহু বিজেপি কর্মী সমর্থক এর মনের কথা। তিনি লিখেছেন সদ্য গঠিত বিজেপির রাজ্য কমিটি প্রসংগে আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া
জি সি মণ্ডল: ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই গতকাল বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বে ব্যাপক রদ বদল হয়েছে।এসেছে বেশ কিছু নুতন মুখ। বিজেপির বহু সমর্থকের দীর্ঘদিনের আশা ছিল লড়াকু নেতা দুধ কুমার মন্ডল রাজ্য কমিটিতে স্থান পাবেন। না তিনি পান নি। অথচ বিজেপির দীর্ঘদিনের এই সুসংগঠক দুধকুমার মন্ডল বিরোধি রাজনৈতিক দলের লোকেদের হাতে বহু বার মার খেয়ে হাত পা ভেংগেছেন। বিজেপির যুব মোর্চার বিদায়ী সভাপতি তরুন তুর্কি নেতা এডভোকেট দেবজিৎ সরকার আরো বেশি দায়িত্ব পাবেন সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। না পাননি।

এই দেবজিৎ সরকারকে দাড়িভিট আন্দোলনে যুক্ত থাকার অপরাধে ১ মাস জেলে কাটাতে হয়েছে। রাজ্য বিজেপির কোনও নেতাকেই জেলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটাতে হয়নি!! বিজেপির ছাত্র সংগঠন, “অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের” কেউ স্থান পায়নি নুতন কমিটিতে। দুধ কুমার মন্ডল, দেবজিৎ সরকাররা ভালো ছেলে, সৎ এবং আদর্শবান ছেলে, ভালো সংগঠক কিন্তু ডানপন্থী রাজনীতির পাটিগণিত বোঝে না। গোপন মোসাহেবিটা করতে পারেনি বলেই কাজ প্রকারান্তে এঁনারা অসম্মানিত, উপেক্ষিত হন। রাজ্যে ক্ষমতায় না আসতেই এই যদি বিজেপি নেতৃত্বের অবস্থা হয় তবে ক্ষমতায় এলে ক্ষমতার দম্ভে না জানি কত দেবজিৎ দুধকুমারের মত মানুষের সম্মানহানি হবে কে জানে!!!

সেই যদি সাধুখা, সিং, ঘোষ, খাতুনদের মত তৃণমূলের পুরোনো মদ বিজেপির নুতন বোতলে ঢালতেই হয় তবে টিএমসি দলটাই বা কি দোষ করল!!? কোনও মানুষ উর্দি বদল করলেই মানুষটা যে পাল্টে যায় না তা নির্বোধরাও বোঝেন। এই নাকি শোনা যায় বিজেপির নেতৃত্বে আসতে হলে দীর্ঘকাল সংঘ পরিবারের সাথে থেকে সংঘের আদর্শে জারিত হয়ে আসতে হয়!!! আসলে সবই হচ্ছে যেন তেন প্রকারেন ক্ষমতা দখলের লডাই, তাই বেনোজলের অনুপ্রবেশ। একদা বাম-পন্থী বিধায়ক মাফুজা খাতুন বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে দাড়িয়ে হেরেছেন, এখন তিনি রাজ্য সহ-সভানেত্রী!!! দুদিন আগে তৃণমূল সুপ্রিমোকে বাংলার মা বলে তোষামোদ করেছিলেন যে অত্যাচারী পুলিস সুপার তিনি বিজেপির টিকিটে হেরে গিয়েও আজ রাজ্য সহ-সভানেত্রী!! আর সাংসদ সাধুখা বা অর্জুন সিং এর নাম নাই বা বললাম।
নির্লজ্জের মত নারদাখ্যাত শোভনবাবুকে দলে আনার জন্যে যেভাবে বিজেপি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্ব আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তাতে আগামী দিনে কি হতে চলেছে তা অনুমেয়। বিজেপির এই রাজ্যে উত্থান সোসাল মিডিয়ায় লাগাতার প্রচারের ফলে। আর যারা এই প্রচার করে আসছেন তারা অধিকাংশই সরাসরি বিজেপির সাথে সক্রীয়ভাবে যুক্ত নন, স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই তা করছেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে এরেস্ট হয়েছেন কিন্তু সেই ভাবে বিজেপিকে দলীয়ভাবে তাদের পাশে দাড়াতে দেখা যায়নি।তাই এবার আমাদেরও ভাবার সময় এসেছে।
যে দলে দেবজিৎ সরকার, দুধ কুমার মন্ডলের মত মানুষরা উপেক্ষিত হন তোষামোদ না করতে পারার অপরাধে সেই দল যে আগামীদিনে আমজনতাকেই উপেক্ষা করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?????? তৃণমূলের বাতিল নেতারাই যদি আজ রাজ্য বিজেপি কমিটি আলোকিত করার সৌভাগ্য লাভ করেন তবে তৃণমূল দলকে রাজ্য থেকে বিদায় জানিয়ে কী লাভ হবে????? লোকগুলো দল বদল করলেই তো আর তাদের স্বভাব বদলে যেতে পারে না।

এবার প্রশ্ন আমরা বাংলার মানুষ কি চাই? দুর্নীতিগ্রস্থ নেতামুক্ত তৃণমূল বাংলায় ২০২১ সালে পুননিবার্চিত হোক না কি তৃণমূলের বাতিল এবং দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের নেতৃত্বে রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসুক? আম জনতার ভোটেই তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল, তার কারন ছিল দীর্ঘ বাম জমনার অন্যয় অবিচার। আম জনতার মধ্যে বামেদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারনেই বামরাজত্বের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী এখানেই ভুল করেছিলেন তাঁর ধারনা ছিল তাঁর এবং তার দলের প্রতি মানুষের ইতিবাচক সমর্থনের ফলেই তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর এই ভুল ধারনা তাকে ক্ষমতার উচ্চ দম্ভে আসীন করেছিল। মানুষও ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করল বাম হার্মাদদের তাড়িয়ে বাটপাড়দের তারা ক্ষমতায় এনেছেন।
এই রাজ্যের নাগরিকদের এক বিরাট অংশ মুস্লিমদের হাতে অত্যাচারিত হয়ে নিঃসম্বল অবস্থায় শুধু মাত্র নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় রক্ষার জন্যে পুর্ব পাকিস্থান থেকে উদ্বাস্তু হয়ে এই রাজ্যের মাটিতে আশ্রয় নিলেও তাদের মধ্যে কোনও দিন মুস্লিম বিদ্বেষ সে ভাবে পরিলক্ষিত হয়নি। তৃণমূল সুপ্রিমো রাজনৈতিক মেরুকরণে সেই দিকেই নজর দিলেন। মমতা ব্যানার্জি অত্যন্ত সুকৌশলী রাজনীতিবিদ। তিনি জানতেন তাঁর প্রধান বিরোধী দল বামেরা। বিজেপির সংগঠন তখন এই রাজ্যে শৈশবের হামা দিচ্ছে। এই শিশুটাকে কিশোর বানালেই বামেরা শক্তি হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে চলে যাবে। এটা বাস্তব সত্য। এই রাজ্য তথা সারা দেশে বিজেপির মুল শক্তি হিন্দুত্ব। অত্যন্ত চতুর রাজনীতিবিদ মমতা ব্যানার্জি জানতেন, এই রাজ্যে হিন্দুত্বকে বিকশিত করতে পারলেই বিজেপির পালে হাওয়া লাগবে আর রাজ্য নির্বাচনিতে ত্রিমুখী লড়াই হলে তা তৃণমূলের ভিতকেই শক্তি যোগাবে। উনি প্রকাশ্যেও লাগাতার ভাবে, সচেতন ভাবেই মুস্লিম তোষণে নামলেন। কিন্তু বাস্তবে মুস্লিমদের কোনও সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সেভাবে লক্ষিত হল না।
প্রসঙ্গক্রমে বলি, সাচ্চার কমিশনের কোনও সুপারিশ কিন্তু এই রাজ্যে বাস্তবায়িত হয়নি। মমতা ব্যানার্জি মুস্লিম তোষনের মধ্য দিয়ে তিনটি কাজ এক সাথে সারলেন।
১) ৩৪ বছর বাম রাজত্বে মুস্লিমদের অধিকাংশ বাম সমর্থক ছিলেন, তিনি ধীরে ধীরে তৃণমূলের প্রতি তাদের সমর্থন আদায় করলেন ফলে বামেরা অনেকটাই সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হল।
২) তৃণমূল বিরোধী হিন্দুদের একাংশ মমতা ব্যানার্জির মুস্লিম তোষণে হতাশ হয়ে ধীরে ধীরে বিজেপির পালে হাওয়া দিতে শুরু করল। বিজেপির উথানে বামেদের ক্ষতিটাই হল বেশি।
৩) নির্বাচনে গায়ের জোর খাটিয়ে আর পুলিসকে নিষ্ক্রিয় করে রিগিং সারা ভারতেই ভোটের এক সাধারন চিত্র। এই রাজ্য তার ব্যতিক্রম নয়। এবার প্রশ্ন তবে ভোটের সময়ে বোমাটা কে বাঁধবে আর কে সেই বোমার ব্যাগ নিয়ে ছুটে বেড়াবে? কেন এ রাজ্যে অর্থনৈতিক এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া এক বিরাট জনসমাজ তো আছেই, যাদের ঘরে তিন চারের চেয়েও বেশি সন্তান। সেই মুস্লিম সম্প্রদায়ের বোকা কিশোর, তরুণের দল মমতা ব্যানার্জির মুস্লিম তোষণের ফাঁদে পা দিল। এই ভাবেই এক সময়ে বিরোধী ভোট ব্যাংককে বিভক্ত করেই হামাগুড়ি দেওয়া বিজেপিকে সুকৌশলে এই রাজ্যে শৈশব থেকে কৈশোরে পৌছে দিলেন মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং–বামেদের শক্তি হ্রাস করতে।
বাংলায় বিজেপি নেতারা ভাবতে শুরু করলেন তাদের নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতায় এবং ক্ষমতায় তাঁরা তাঁদের নাবালকত্ব কাটিয়ে সাবালক হয়ে ১৮ জন সাংসদ নিয়ে দিল্লি গেছেন। এবার তাঁদের কিশোর থেকে তারুণ্য লাভের মধ্য দিয়ে নবান্নে গিয়ে বসার অপেক্ষা। আমার এই লেখার মধ্য দিয়ে খুব স্পষ্ট একটা সতর্ক বার্তা দিতে চাই কেন্দ্র এবং রাজ্য বিজেপির উচ্চ নেতৃত্বকে।

কেউ বা কোনও ব্যক্তি আপনাদের উচ্চ নেতৃত্বকে তেল মাখিয়ে নেতা হওয়ার উদগ্রতা দেখাতে পারেন কিন্তু আমার মত হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ আম জনতা কিন্তু কোনও দিন দলদাসত্ব দেখায়নি আর কোন দিন কোনও নেতাকে তৈল মর্দন করার বিন্দু মাত্র বাসনা প্রদর্শন করেননি। তাই আমাদের মতামতকে উপেক্ষা করার দুঃসাহস দেখাতে যাবেন না। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী নই, নেহাতই আম জনতা। এখনও সময় আছে উপযুক্ত দলীয় নেতা কর্মীদের উপেক্ষা না দেখিয়ে তাঁদের যোগ্য সম্মানজনক দায়িত্ব দিন। তোষামোদকে যোগ্যতার মাপকাঠি নয় বরং তাদের সোসাল এবং পলিটিক্যাল এক্টিভিটিসকে মাপকাঠি করুন। মন্ডল থেকে রাজ্য পর্যন্ত সেই সব দীর্ঘ দিনের কর্মী নেতাদের সামনের সারিতে আনুন, যাদের প্রকৃত যোগ্যতা আছে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
আজ মমতা ব্যানার্জির এই টলমল অবস্থার একটাই কারন তিনি পুরোনো দলীয় কর্মী, নেতাদের গুরত্ব না দিয়ে বাম থেকে হটাৎ আসা বেনোজলে দলকে স্নাত করিয়েছিলেন।তার একটা উদাহরণ দীর্ঘকালের বাম জমানার প্রাক্তন মন্ত্রী জনাব রেজ্জাক আলি মোল্লা এখন তার মন্ত্রিসভা আলোকিত করেছেন। যে বাম হার্মাদরা রাজ্য জুডে সন্ত্রাস কায়েম করেছিল আজ তারাই সাবেক তৃণমূল কর্মীদের পিছনে ফেলে দিয়ে দলে প্রাধান্য পেয়েছেন বলে তৃণমূলের ভিত আলগা হতে যে শুরু করেছে তা স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো উপলবদ্ধি করতে শুরু করেছেন বলেই সাবেক তৃণমূলীরা যাতে পুর্বের মত সক্রীয় হন তার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই সাবেক তৃণমূলিরা ধান্দাবাজ নন তাঁরা বাংলায় বাম আমলে রাজনৈতিক কারনে মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন, তাঁদের বাড়ি, সম্পত্তি লুঠ হয়েছে, অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন, পরিবারের আপনজনকে খুন হতে দেখেছেন বাম হার্মাদদের হাতে। তাদের ঘাম, রক্তে ভেজা পথ ধরেই বামেরা বিদায় নিয়ে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য তৃণমূল ক্ষমতায় আসার কিছু দিন পরেই এই সব হার্মাদের দল উর্দি পালটে সুড়ূৎ করে তৃণমূলে ঢুকে তাদের পুরোনো মৌরসিপাট্টা বজায় রাখল। সাবেক তৃণমূলীদের কাছে দিন বদল বিশেষ কোনও বার্তাবাহনে সক্ষম হল না।
আজ বিজেপি ক্ষমতায় না আসতেই অনুরূপ চিত্র যদি দেখতে হয়, মানে রাজ্য বিজেপি তৃণমূলের বাতিল ঘোড়ার আস্তাবল হয়ে পড়ে তবে ক্ষমতায় আসলে বিজেপি যে আজকের সব বিরোধী দলের ধান্দাবাজ “মহাপ্রভুদের” লীলাভুমি হবেই তা বলা বাহুল্য। আজ একই প্রক্রিয়া যদি বিজেপির মধ্যে পরিলক্ষিত হয় জানবেন, বিজেপিরও টালমাটাল পরিস্থিতিই হবে। তাই বলি বিজেপির উচ্চ নেতৃত্বকে–নিজেদের সংশোধন করুন, না হলে ২০২১ শে কী দুর্দশা হয় সেটা দেখার জন্যেই অপেক্ষা করুন। সেই দিন বুঝতে পারবেন আমার কথাটা কতটা বাস্তব সত্য। ২০২১ শে তৃণমূল তারুন্য হারিয়ে বৃদ্ধ হয়ে বানপ্রস্থে যাবে, নাকি সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া রাজ্য বিজেপি এক লাফে বৃদ্ধ হয়ে বানপ্রস্থে যাবে? অদুর ভবিষ্যতই সে উত্তর দেবে। Written by G.C Mandal, Advocate From Tollygunj Ph No.9830856567

Loading

Leave a Reply