করোনাসুরের ভয়ে শুধু ভারত বর্ষ নয় সারা পৃথিবীর কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। বন্ধ হয়ে গেছে কল-কারখানা। বহু যোগাযোগ মাধ্যম। মানুষ মরেছে লাখে লাখে। এখনো মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত। এখনো করোনার কোন ভ্যাকসিন সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। চিকিৎসা মানে মানুষের সঙ্গ ছেড়ে একলা ঘরে থাকা, কিছু পুষ্টিকর পথ্য এবং পরিচ্ছন্নতা। এখন করোনার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া বা নিজের মধ্যে ইমিউনিটি বাড়িয়ে তোলাই মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু ইমিউনিটি পাওয়ার কি এমনি এমনি বাড়ে বা আদৌ বাড়ে? ডাক্তাররা বলছেন মানুষের ইমিউনিটি এমনিতে বাড়ে না। গর্ভাবস্থায় মা যেরকম পুষ্টিকর খাবার খায়, যত্নে থাকে এবং বাচ্চা সময় মত মায়ের বুকের দুধের উপরে নির্ভর করে সেই বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সার্বিক বিকাশ। দৈনন্দিন বদঅভ্যাসে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে পারে কিন্তু বাড়তে পারে না। আর সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার, শারীরিক পরিশ্রম এবং বিশ্রাম এই তিনটির মেলবন্ধন।
আমাদের চেনা পরিবেশের মধ্যে আমরা দেখেছি হঠাৎ যখন লকডাউন ঘোষণা হল তখন কর্মমুখর মানুষ ঘরবন্দী হয়ে থাকাটা কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিল না। নানা অছিলায় বাইরে বেরিয়ে পড়ত। কোন সাবধান বাণী কানে নিলেও মনে নিতে পারছিলনা। তাই মাঝে মধ্যে পুলিশের হাতে মার খেতে হয়েছে। এমনকি রাস্তার ধারে কান ধরে উঠবস সহ নানা হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠে এখন মানুষ অনেকটাই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছে দোকানপাট খুলেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুলো অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিমান, রেল যোগাযোগ আর শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়া বাদ বাকি সবই চলছে স্বাভাবিক গতিতে। মানুষ আবার পুরনো অভ্যাসবশত প্রয়োজনীয় পরিছন্নতা, মুখোশের ব্যবহার সবকিছুই অবহেলা করছে। খবরে দেখতে পাওয়া যায় করোনায় মৃত্যু অব্যাহত। দিনে দিনে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনায় সুস্থ হবার খবরও আছে যা মানুষের মধ্যে আশা জাগায়, ভয় দূর করে। কিন্তু শারীরিক দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বেড়ে গেছে মানুষের। তাই মানুষ এখন আড্ডা ছেড়ে, আত্মীয় বাড়ি ছেড়ে, নিমন্ত্রণ, পার্টি এসব ছেড়ে অনেকটাই নিঃসঙ্গ। তারই ঠিক বিপরীতে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির মিটিং, মিছিল জমায়েত। মানুষ বুঝতে পারছে না কোন পথে যাবে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেবে? বাড়ির অনুষ্ঠানে সব আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করবে? নিমন্ত্রণ রক্ষা করবে? নাকি আগের মতো সাবধানতা নিয়ে চলবে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন মত কোথাও অনেক মানুষের ক্ষোভ – করোনার সংক্রমণ কি শুধু মাত্র ট্রেনে আর শিক্ষাক্ষেত্রে আর কোথাও নেই? অথচ ট্রেন চলছে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন রেলকর্মীকে নিয়ে। কিন্তু স্কুল কলেজের পড়ুয়াদেরকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তব হলো এই স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা তাদের অভিভাবকরাই এই জনগণ। ভিড় জমাচ্ছে কখনো বাজারে কখনো শপিংমলে বা অন্য কোথাও। খবরে বহুবার দেখানো হয়েছে অনেক সময়ই বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াত করা হয়নি। দেখা গেছে শপিংমলগুলোতে ঢোকার সময় হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হয় মুখে মুখোশ আছে কিনা দেখে নেওয়া হলেও ভেতরে গা-ঘেষাঘেষি। একই ট্রায়াল রুম নির্বিবাদে ব্যবহার করছে সবাই।
এখন বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজার সময়। শেকড়ের টানে বাঙালির ঘরে ফেরার, আনন্দে মাতোয়ারা হবার সময়। নতুন পোশাকে দলে দলে প্যান্ডেলে ঘুরে, বন্ধু আত্মীয়দের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে বেড়ানোর সময়। ওদিকে স্বাস্থ্য দপ্তর সতর্ক করেছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এই পুজোর পর করোনার সুনামি আসতে পারে। তাই করোনার হাত থেকে বাঁচতে সতর্ক হতেই হবে। বিভিন্ন মিডিয়ায় তাঁরা বলছেন যে পুজো দেখুন টিভিতে। যদি বাঁচতে চান তো ঘর থেকে দয়াকরে বেরোবেননা। নয়তো বাঁচানোর জন্য ডাক্তার, পুলিশ কাউকেই পাবেননা। কারণ তারাও আপনাদেরই কারণে আপনাদের মতোই রোগির বিছানায় থাকবে। হাসপাতাল শয্যা পর্যাপ্ত আছে একথা যতই ঘোষণা করা হোক না কেন বাস্তবে এর বিপরীত বিপজ্জনক ছবিটাই দেখতে পাবেন।
কিন্তু এহেন বাঙালি এমন উৎসবের মরশুমে পারবে কি নিজেদেরকে আবারও সংযত করে গৃহবন্দি রাখতে?