জিজ্ঞাসি’ছ পোড়া কেন গা’? শুনিবে তা’ ?—শোন তবে মা— দুখের কথা বলব কী করে বা ! সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর সহমরণ কবিতায় সতীর নির্মম জীবন যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর একই চিতায় সতীদের জীবন বিসর্জন দেওয়াই ছিল এককালের সমাজের রীতি। সতীদের এমন দুর্বিষহ পরিণতির কথা প্রায়দিনই মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারে থেকে প্রত্যক্ষ করতেন ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়। কাশিমবাজারের সতীঘাটে ধর্মীয় গোঁড়ামির এই চিত্র তাঁর মনে দাগ কেটে যায়। তারপরই তিনি আন্দোলন গড়ে তোলেন। সতীদাহ রদের জন্য তাঁর চিন্তাভাবনা যে কাশিমবাজার থেকে শুরু হয়, সেই সতীঘাট নিয়ে অবশ্য এখন খুব একটা আগ্রহ নেই কারও।
২২মে রামমোহনের জন্মদিনে মুর্শিদাবাদবাসী চাইছেন সতীদাহ রদের ইতিহাস বিজড়িত এই ঘাট হেরিটেজ স্বীকৃতি পাক। সেখানে ফলক বা সতীঘাটের কোনও সৌধ বানিয়ে সংরক্ষণ করা হোক, যাতে আগামী প্রজন্ম এই ইতিহাসের ব্যাপারে জানতে পারে, এমনটাই চাইছেন জেলাবাসী।
বহরমপুর পুরসভার অন্তর্গত এই সতীঘাটের নাম অনেকেই জানেন। কিন্তু নামের ইতিহাস জানেন না। বহরমপুর শহরের শেষ প্রান্তে কাটি গঙ্গার ধারে এই ঘাটে শিব মন্দির তৈরী করা হয়েছে। পাতালেশ্বর মন্দির নামে খ্যাত সেই মন্দিরে ঘুরতে অনেকেই আসেন, কিন্তু সতীঘাটের ব্যাপারে জানেন না। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৮০৩ সালে পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পর রামমোহন রায় মুর্শিদাবাদে এসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে চাকরি করেন। সে সময় কাশিমবাজার ছিল বৈষ্ণব অধ্যুষিত অঞ্চল, যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল অত্যন্ত বেশি। রামমোহন ওই সতীঘাটে গিয়ে দেখেছিলেন সেখানকার সতীদাহের বীভৎসতা ও নারীদের উপর অকথ্য অত্যাচারের পৈশাচিক লীলার রূপ। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রমাপ্রসাদ ভাস্কর বলেন, ধর্মীয় গোঁড়ামির ফলে সতীদাহ প্রথা যে সমস্ত জায়গা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল তার মধ্যে কাশিমবাজারের সতীদাহ ঘাট অন্যতম। ১৮১২ সালে সতীদাহ রদের জন্য রামমোহন রায়ের চিন্তাভাবনা এই মুর্শিদাবাদ জেলায় আসার পরেই শুরু হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। তাই সকলেই চান ইতিহাসের সাক্ষী থাকা এই ঘাট সংরক্ষণ করা হোক।