দেশ

ককবরক নাটক, ককবরক দেশাত্মবোধক গান এবং ককবরক বাউল সঙ্গীত সহ অনবদ্য সাহিত্য চর্চার জন্য ত্রিপুরা থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে মনোনীত হলেন বেণী চন্দ্র জমাতিয়া

ত্রিপুরা থেকে বিশ্বেশ্বর মজুমদার এর রিপোর্ট।গোমতী জেলা:-ককবরক নাটক, ককবরক দেশাত্মবোধক গান এবং ককবরক বাউল সঙ্গীত সহ অনবদ্য সাহিত্য চর্চার জন্য ত্রিপুরা থেকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে মনোনীত হলেন বেণী চন্দ্র জমাতিয়া। তার বয়স ৯৫ বছর। বাড়ী গোমতী জেলার উদয়পুর মহকুমার মহারানী হাতী ছড়ার প্রত্যন্ত উপজাতি জনপদ এলাকায়। তার এই প্রাপ্তিতে পরিবার পরিজন সহ গোটা এলাকা খুশির আবহে অম্লান হতে দেখা যায়। জীবনের শেষ লগ্নে এসে এত বড় প্রাপ্তিতে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না বেণী চন্দ্র জমাতিয়া। কথা বলতে গিয়ে বেশ কয়েক বার কেঁদেছেন তিনি। অবাক বিষয় হল যে মানুষটি কোন দিন স্কুলে যান নি কি করে এত গুনের অধিকারী হতে পারলেন? তিনি জানিয়েছেন ছয় বছর বয়সে কাকড়াবনের করিম মিয়ার কাছে বছর দুয়েকের মত বাংলা এবং ইংরেজি শিখেছেন। আর কোন দিন পড়াশোনা করেননি।

এই সামান্য অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করেই সংগ্রামে অবতীর্ণ হন বেণী। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি শুরু। পেশায় কৃষক বেণী বাবু একের পর এক ককবরক দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, ধর্মীয় সঙ্গীত, ককবরক নাটক সহ সাহিত্য চর্চায় এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও ভগবান শিবের জীবন কাহিনি লেখা শুরু করেন। তার লেখা অনেক বই এর সন্ধান পাওয়া যায় তার বাড়িতে গিয়ে। অথচ তার বই কোন বই মেলা, কোন প্রকাশণীতে কিংবা কোন বই এর দোকানে দেখা যায় নি। তার এই অনবদ্য অবদানের ইতিহাস ভারত সরকারের নজরে আনেন দিল্লীতে সাইকোলজির প্রফেসর হিসাবে কর্মরত তার নাতনি অর্চনা জমাতিয়া। তখনও বিন্দু পরিমাণ আশা করেননি ভারত সরকার কর্তৃক এত বড় পুরস্কারে তিনি মনোনীত হবেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন এই খবর শুনতেই পরিবারের মধ্যে খুশির জোয়ার বইতে শুরু করে। দিল্লীতে গিয়ে নিজের হাতে পুরস্কার নেওয়ার মত সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন বেণী বাবু। তার নাতনি অর্চনা তার হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করবেন এতেই তিনি আবেগে আপ্লুত।

তার বাড়িতে গিয়ে আজ জানা যায় যখন যে কাগজ কিংবা বই তিনি সামনে পেতেন সেটাই তিনি পড়তেন। ১৯৯০ সালে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে শিক্ষা মূলক ভ্রমনে কেরালা গিয়েছিলেন বেণী বাবু। বর্তমানে তিনি তার ছোট কন্যা পূর্ণীনি জমাতিয়ার কাছে থাকেন। ওনার চার ছেলে পাঁচ মেয়ে। তার মধ্যে এক ছেলে এক মেয়ে মারা গেছেন। বাকিরা কর্ম সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় আছেন। বাবার এই প্রাপ্তির খবর পেয়ে সবাই বাবার কাছে ছুটে আসতে শুরু করেছেন। তার নাতনি কুলুঙ্তি জানায় দাদুর এই প্রাপ্তি রাজ্যের যুব সমাজকে অনেক অনুপ্রাণিত করবে। এই প্রাপ্তি রাজ্যের গর্ব বলে মনে করেন।

Leave a ReplyCancel reply