বাংলা সিনেমার পক্ষে ২০১৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে বছরটা বেশ কাটল টলিউডের। রিল থেকে রিয়েল, ঘটনাবহুল। সিনেমার তালিকাও মনে রাখার মতো। কোনও ছবি বক্স-অফিসে কখন এল আবার কখন চলে গেল, জানাই গেল না। আবার এরকম ছবিও ছিল যা সমালোচকদের মতে সেরা, কিন্তু দর্শকের বিচারে ঠিক উল্টোটা। নতুন বছরে নতুন ছবি ছোট মুখে বড় কথা ভ্যালেন্টাইন্স ডে শুভ মুক্তি পেতে চলেছে।তবেই মিডিয়া প্রোমোশনের অভাবে। নেই মাল্টিপ্লেক্সের ঠিক টাইমিং। তা হলে ছবির ভবিষ্যৎ কী?সত্যি এ এক জটিল প্রশ্ন আমাদের সামনে।
মোবাইল ফোনে আমরা যারা ছবি দেখছি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যাদের আধার। ভরসা। তাদের সিনেমা কি কাজে লাগবে? নাকি একশো বছরেই তা উবে যাবে? দুনিয়া জুড়ে একের পর এক বিগ হাউস ধসেছে। সম্প্রতি বন্ধ হল ফ্যান্টমের মতো প্রযোজনা সংস্থা। অনুরাগ জানালেন, আর প্রযোজনা নয়। এ বার শুধু পরিচালনা। বাঙালির সিনেমা কালচার, যা হেমন্ত কালে, নন্দনে দেশ-বিদেশের পরিচালকের রঙে রঙিন হত, তার কি তবে অবসান হতে চলল? নাকি তার ভবিষ্যৎ মুরারীবাবুদের মতো কিছু মানুষের হাতে, যাদের আরও সদিচ্ছা, সাহস আর শিল্পবোধ সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে? ভরসা দেবেন তরুণরাও? ঋত্বিক ঘটক বা সত্যজিৎ রায়ের শহরের মানুষরা কী বলছেন?আজকের বাংলা চলচ্চিত্র, কিংবা সহজ করে বললে, বাংলা সিনেমা। এটুকু শোনা মাত্রই নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ কেউ ভ্রূ কুঁচকে ফেলেছো, কেউ কেউ নাক সিটকাতে শুরু করেছো, কেউ কেউ আবার চোখে প্রবল বিরক্তি নিয়ে ভাবছো, কী হচ্ছেটা কী! বাংলা সিনেমা, সে আবার কোনো কিছু হলো নাকি!তোমাদের ভাবনাটা শতভাগ অবান্তর না হলেও, এর বেশিরভাগটাই যে ভ্রান্ত, সে কথা জানার জন্য বাংলা সিনেমা ছোট মুখে বড় কথা সম্পর্কে খানিক জানতেই হবে। ছোট মুখে বড় কথা এই নামটি খুব পরিচিতি, এ কথাটি শোনা যায়। কিন্তু এই কথাটি নিয়ে ছবি করবে সেটাই ভাববার বিষয় ছিল।
বাংলা সিনেমা জগতের এরকম একটি সিনেমা আগে কোনদিন হয়নি। এই প্রথম বাংলার চলচ্চিত্রের নতুন রূপ দিতে চলেছে পরিচালক সনু দাস,বাপ্পা ও মৃত্যুঞ্জয় সরদার। ছোট মুখে বড় কথা কাহিনী চিত্রনাট্য সংলাপে সনু দাস। মূলত এটা ছোটদের নিয়ে ছবি এই ছবিতে সমাজের শিক্ষা মূলক কিছু দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক সনু দাস বাপ্পা ও মৃত্যুঞ্জয় সরদার। বর্তমান যুগে স্মার্টফোন যেভাবে ছোটদেরকে আরো স্মার্ট করে তুলছে, আর এর পিছনে বড়লোক বাড়ির বাচ্চাদের মা-বাবারা রয়েছে। বাবা-মার পিছনে তারা যে অশ্লীল ছবি দেখে নিজেদেরকে খারাপ পথে নিয়ে যাচ্ছে, বাবা-মার হতো সেটা টের পাচ্ছে না। এই ছবিতেই সে কথাগুলো ফুটিয়ে তুলেছে, আর এই বড়লোকেরা বস্তি বাড়ি ছেলেদেরকে অবহেলা করে। তারা কিন্তু মোবাইল থেকে অনেক দূরে রয়েছে, তারা কিন্তু আজকের সমাজে এত সহজে নষ্ট হচ্ছে না। বড়লোক বাড়ির ছোট বাচ্চা মেয়েটি যখন কিডন্যাপ হয়ে গেল তখন এই বস্তিবাড়ির ছেলেরাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলো, পুলিশ প্রশাসনকে জানালো । আর সমাজে সবচেয়ে জঘন্যতম একটা বিষয় সেটি হচ্ছে আশ্রমের মাদার এলিজা স্বয়ং, ওই বাচ্চা মেয়েটাকে কিডন্যাপ হতে সাহায্য করেছে। মহারাজের কথা মতন এলিজা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং নিজেকে শুধরে নিয়েছেন,আশ্রমের বাচ্চারা পুলিশকে অনুরোধ করেছে তাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। আর এই মাদারের চরিত্রে অভিনয় করছেন অনামিকা সাহা নিজেই। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন সমীর দাস মহাদেব, ছোট মুখে বড় কথা মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সনু দাস ও মৃত্যুঞ্জয় সরদার। শিশুদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিশু শিল্পী নিশান ও ও আয়ুষী দাস, খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন তপন আদক, ছোটদের চরিত্রে অন্যান্যরা অভিনয় করেছেন ড্যানি সদ্দার, প্রিয়াঙ্কা দাস, ঋদ্ধিমা রাজ শংকর, মিষ্টি, সৃজা। কাহিনী চিত্রনাট্য সংলাপ সনু দাস।তবে ভারতবর্ষে প্রথম চলচ্চিত্র শুরু করার কৃতিত্ব বাঙালিদের হলেও, প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মিত হয় মুম্বাইতে, ১৯১৩ সালে। এরপর কলকাতায় ১৯১৬ সালের দিকে ম্যাডান থিয়েটারস কোম্পানি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রথম বাংলা নির্বাক পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র বিল্বমঙ্গল মুক্তি পায় ১৯১৯ সালের ৮ নভেম্বর। এ ছবির পরিচালক জ্যোতিষ ব্যানার্জি (মতান্তরে রোস্তমজী দুতিওয়ালা) হলেও নেপথ্য স্থপতি ছিলেন ঢাকার নওয়াব এস্টেটের ম্যানেজারের পুত্র পরবর্তীকালের বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি। কাজেই, চলচ্চিত্রের নির্মাতা ওপার বাংলার হলেও, নেপথ্য ভূমিকা এপার বাংলার চলচ্চিত্রকারদেরই। করেন। ১৯২১ সালে কলকাতায় বিলাত ফেরৎ নামে একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এর প্রযোজক ও অভিনেতা ছিলেন বাংলাদেশের বরিশাল জেলার ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।পশ্চিমবঙ্গ প্রথম এমন এক ভাষাগত সিদ্ধান্ত নিল৷ ভারতের যে অংশে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সবথেকে বড় এবং সচল, সফল, যেখানে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি মানুষের টান অনেক জোরালো, সেই দক্ষিণ ভারতের দুটি প্রধান রাজ্য তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকেই যথাক্রমে তামিল এবং তেলুগু সিনেমার জন্যে এমন নিয়ম চালু আছে৷ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ঋদ্ধ মহারাষ্ট্রেও মারাঠি ভাষায় তৈরি ছবির জন্য এই একই নিয়ম বলবৎ৷
হিন্দি সিনেমা এবং হিন্দি ভাষার আগ্রাসন থেকে আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে বাঁচাতে এই নিয়মের সুফলও পাওয়া গেছে তিন রাজ্যেই৷ পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বাংলা ছবির জন্য এমন সংরক্ষণের তদ্বির করেও বিমুখ হতে হয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিনিধিদের বলেছিলেন, ‘‘আমরা একটা অঙ্গরাজ্যে আছি, আমরা এটা করতে পারি নাকি! আমরা এটা করলে হলমালিকরা কোর্টে চলে যাবে, আমরা অপদস্থ হব! এসব আমাদের কাজ না৷ আমরা করব না৷ সেক্টারিয়ান আউটলুক নিয়ে আপনারা এসেছেন, এসব হয় না!’’ অনিকেত সেসময় সাংবাদিক, তখনও চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হননি৷ সাংবাদিক হিসেবেই বুদ্ধবাবুকে বলেছিলেন, অন্য রাজ্যে তো এরকম নিয়ম আছে৷ তাতে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব ছিল, ‘‘ওসব গাজোয়ারি৷ আইন মেনে নয়৷’’সেই প্রেক্ষিতে অনিকেত এখন আশ্বস্ত, যে বাংলা সিনেমা দেখানো বাধ্যতামূলক করার একটা আইনি সুযোগ তৈরি করল বর্তমান সরকার৷ এখন ‘‘একটা লিগাল প্রভিশন হলো৷ লিগালি আমরা এটা করতে পারি৷ সংরক্ষণ করতে পারি৷ সেইদিক থেকে এটা যুগান্তকারী,’’ বলছেন অনিকেত৷