সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাকে খুন করা হয়েছে ! নাকি তাকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে তা জানার জন্য সকলেই উদগ্রীব। সুশান্ত মারা যাবার বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেলেও এবেলা-ওবেলা সোশ্যাল মিডিয়ায় রহস্যজনক তথ্য উঠে আসছে। ভারতবর্ষের মানুষ এটা পরিষ্কার বুঝে গেছেন যে সুশান্তকে নিয়ে যাই পোস্ট হবে তাই সুপার হিট হবে। আর সেই কারণেই বোধহয় প্রচারে ভেসে থাকতে তসলিমা নাসরিন থেকে আমেরিকান প্যারানরমালের বিশেষজ্ঞ, এমনকী নরেন্দ্র মোদিও উঠে পড়ে রাজনীতি করতে লেগেছেন এই ইস্যুতে।
সমস্ত মানুষ যখন সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যু রহস্য জানতে চাইছেন, তখনই একের পর এক বিস্ময়কর বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পাচ্ছে। এমনকী সুশান্ত অনুগামীদের মধ্যেও বিভিন্ন জল্পনা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। তার কতটা সত্য এবং কতটা মিথ্যে তা কেউই যাচাই করেনি। এমনকী আমেরিকান প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞ যে ভিডিও পোষ্ট করেছেন ইতিমধ্যেই সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তার জন্য যদিও বা আমেরিকানদের তুলনায় ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়া এমনকি নিউজ পোর্টালগুলিও তা ভাইরাল হতে অনেকটাই সাহায্য করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই তা হল নিজেদের প্রচারের আলোয় আনা। যদিও বা কেউই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে যায়নি। এমনকী ইন্ডিয়ান প্যারানরমাল রিসার্চের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকান প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞের এই ভিডিও নাকি সম্পূর্ণ জাল। তবে এত কিছু বিস্ময়কর এর মাঝে গোলমেলে অবস্থার মধ্যে আসল দোষীরাই চাপা পড়ে যাচ্ছে না তো?
এ তো গেল আমেরিকার কথা, এবারে আসা যাক নিজেদের দেশে। সুশান্তের মৃত্যুর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবলমাত্র তাঁকে নিয়েই বেশ কয়েক লক্ষ পেজ ক্রিয়েট হয়েছে। এমনকী প্রধানমন্ত্রীর নিজেও সিবিআই তদন্তের জন্য জানিয়েছেন। করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও সুশান্ত সিং এর মৃত্যু নিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষ নড়েচড়ে উঠেছে। তা প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পেরেছেন এবং সেই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন। সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু রহস্য ঘিরে। এমনকী তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন, শ্রীদেবী মারা গিয়েছিল সেই নিয়ে কোনও জল ঘোলা হয়নি। আদৌ কী বাথটবে সামান্য কিছু জলের মধ্যে কেউ আত্মহত্যা করতে পারে? এত বছর হয়ে যাওয়ার পরও শ্রীদেবী মৃত্যুর জট কাটিয়ে উঠতে পারেনি কেউই। এমনকী সুশান্ত সিং এর মৃত্যুর পর বেশ কয়েকজন অনুরাগী আত্মহত্যা করেছিল। তারই বা বিহিত কি! তসলিমা নাসরিন এক যায়গায় লিখছেন তাঁকে কেউ বলেছিলেন সুশান্ত সিং এর বয়স আর শ্রীদেবীর বয়সের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, সে কারণেই এই মৃত্যু নিয়ে এত জল্পনা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে তসলিমা নাসরিন বলছেন, জিয়া খানের মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স সুশান্ত সিং এর থেকে কিছুটা কমই ছিল। আসল ব্যাপার হলো এই যে সকলেই নিজের আখের গোছাতে রাজনীতি শুরু করেছে। সকলেই এটা বুঝে গেছে যে সুশান্ত সিং নিয়ে যাই লেখা হোক না কেন তা ভাইরাল হবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা জিনিস ঘোরাঘুরি করছে তা হলো রুদ্রনীল ঘোষের ‘দাদা আমি সাতে-পাঁচে থাকি না’। রুদ্রর সেই ভিডিও যতটা না ভাইরাল হয়েছে তার থেকেও বেশি ভাইরাল হয়েছে তার একটি অনুগামী বাচ্চা নাট্যকারের ভিডিও। আর তারপরে সমস্ত বাঙালি তার ছোট্ট ছেলেকে বা মেয়েকে ভাইরাল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সকলেই এখন ‘দাদা আমি সাতে-পাঁচে থাকি না’। অাসল ব্যাপার হলো নিজেকে তুলে ধরা। সে কারণে রাজনীতি ভুলে এটা ওটা নানান রকম বিস্ময় তৈরি না করে সুশান্ত সিং এর আসল মৃত্যু রহস্য খুঁজে বের করে সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হলে লাভবান হতো সকল অনুরাগী। তার সাথে সুশান্তের পরিবারও।