বিশ্ব

যে পুরুষ বেশি দাম দেবে মেয়ে তার, অভিনব বউ কেনার হাটে ব্রাইডের ভার্জিনিটি আবশ্যকীয়

সাধারণত বিয়ের আগে পুরুষরা মেয়েদের পছন্দ করার রীতি বেশি প্রচলিত। কিন্তু ইউরোপের কিছু সমাজে মেয়েদের পুরুষ পছন্দ করা প্রাচীন রীতি এখনও চালু রয়েছে। তবে মেয়েরা সেই পুরুষের সাথেই বিয়ে করবে যে সর্বোচ্চ দামে তাকে কিনে নিতে পারবে। মধ্যযুগীও প্রথার এমনই নিয়ম। আধুনিক ট্রাডিশনাল সাজে অবিবাহিত তরুণীরা ভিড় জমান উত্তর ইউরোপের একটি মেলায়। যেখানে দেখা যায় আধুনিক ও ট্র্যাডিশনাল সাজে তরুণীরা ভিড় জমিয়েছে, মডেলিংয়ের কায়দায় হেঁটে বেড়াচ্ছে, নাচছে তারা। আর তাদের অভিভাবকরা নিলামের কায়দায় দরদাম করছে। আর কিছু পরিবার যারা গাঁটে কড়ি কিছু খরচ করেছে। তারা ওখানের মঞ্চ উঠে মেয়ে বিক্রি করছে। (Image Source: Google)

একবিংশ শতাব্দী ডিজিটাল বিশ্বে এ ধরনের কেনাবেচায় অনেকেই হতচকিত। কিন্তু তা হলেও মধ্য বুলগেরিয়ার স্টারা জাগোরায় এই ব্রাইড মার্কেট বসে বছরে চারবার। তবে বসন্তকালীন সময়ে এই মেলায় বেশি ভিড় জমে। মেলার মতো দেখতে হলেও মেলা বললে ভুল হবে। এর আসল নাম হলো ব্রাইড মার্কেট। বাংলায় যার অর্থ বউ কেনার হাট। কালাইদঝি সম্প্রদায়ের মধ্যে চলে এই ধরনের মেলা। ১৩ থেকে ২০ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে এই কেনাবেচা বেশি হয় এবং ১৩ থেকে ২০ বছরের মেয়েরা সব থেকে বেশি মূল্য পায়।২০র বেশি বয়সি মেয়েরা মূল্য কম পায়। দ্যা ট্রাকিস্কি কালাইদঝি হল পূর্ব ইউরোপের এক প্রাচীন জনগোষ্ঠীর নাম। যারা গোঁড়া খ্রিস্টান। এই জনজাতি রোমা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। মূলত যাযাবর জনজাতি এরা। পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় এদের আঠারো হাজার মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে। এই মেলায় মূলত মেয়েরা বিভিন্ন পোশাকে, অত্যাধুনিক সাজ-সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে মেলায় আসে। পরিবারের লোকেরা মেয়েদের মেলায় এনে একপ্রকার দরকষাকষি করে বিক্রি করতে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরুষরা এসে বিভিন্ন দামে এই মেয়েদের কিনে নিয়ে যায়। এতে মেয়েদের কোনও অমত থাকলেও তা তারা কোনওভাবেই না করতে পারে না। মূলত কালাইদঝি সম্প্রদায়ের মানুষ এই মেলাকে ব্যাবসায়িক রূপে দেখে। এদের মূল ব্যবসা হল তামার জিনিস তৈরি করা।

প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে চলা সংসারে এই মেলাকে রোজগারের পন্থা হিসেবে মনে করেন পরিবারের লোকজন।  বছরে চারবার অনুষ্ঠিত হয় ব্রাইড মার্কেট। আর এইখানে কেবলমাত্র বউ কেনাবেচা চলে তা নয়। এখানে চলতে থাকে বিভিন্ন রকমের খাওয়া-দাওয়া। গ্রিল করা মাংস – বিয়ার প্রভৃতি সব কিছুই থাকে। বউ কেনা হয়ে গেলে পুরুষেরা তাদের বউকে নিয়ে নাচানাচি করতে থাকে এবং খাওয়া-দাওয়া করে। এই মেলাতে আড়াই লক্ষ থেকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত ওঠে মেয়েদের দর। তবে কুড়ি বছরের উপরে মেয়েদের দাম অনেকটাই কম হয়। এখানের মহিলারা জানাচ্ছেন তারা অনেকেই এই এই ব্রাইট মার্কেটে অংশ নিতে রাজি না থাকলেও তাদের পরিবারের লোকজন একপ্রকার জোর করেই তাদেরকে এই মেলায় নিয়ে আসে এবং তাদেরকে সুসজ্জিত করে মেলায় প্রদর্শন করা হয়। মেয়েদের সাজ পোশাক দেখে কোনওভাবেই মনে হবে না যে তাদের আর্থিক অবস্থা ততটা ভালো নয়। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাদের ব্রাইডাল মেকআপ এ নিয়ে আসেন, অত্যাধুনিক পোশাক এবং তার সাথে বিভিন্ন সাজ পোশাক এবং চরা মেকআপে।

মেয়েরা এখানে অংশগ্রহণ করে,  তবে বিয়ের আগে প্রমাণ দিতে হয় মেয়েরা ভার্জিন কিনা। যদি ভার্জিন না হয় তাহলে ওই মেয়েদের পরিবারকে বিভিন্ন রকম তিরস্কার করা হয় এবং প্রচুর টাকা জরিমানাও করা হয়। বুলগেরিয়ার একজন নৃতত্ত্ববিদ ভেলকো ক্রুশ কেভিক বলেন, এই মেলা মূলত হয় পরিবারের লোকেদের আর্থিক অনটন মেটানোর জন্য। তিনি বলেন বউ কেনার নামে আসলে পুরুষরা মহিলাদের সম্মান কিনে নেয়। এখানে কিছু কিছু মহিলার পুরুষ পছন্দ না হলেও কেবলমাত্র  টাকার দামের জন্যই অপছন্দের পুরুষের সাথেই সারা জীবন কাটাতে হয়। এতকিছুর পরেও সম্প্রদায়ের মানুষ এই ঐতিহ্য হারাতে নারাজ। কিছু তরুণ-তরুণীর বিপক্ষে গেলেও বয়স্কদের চোখরাঙানির ভয়ে তাদেরকে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেই হয়। তারা মনে করেন এই প্রথার অবলুপ্তি হলে কালাইদঝি সম্প্রদায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

Loading

Leave a Reply