জেলা

পেটের টানে ঝুঁকি নিয়ে সাঁতারে ভাগীরথী পেরিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন কালনার ‘লকডাউনের বিদ্যাসাগর’

লকডাউনের জেরে বন্ধ রয়েছে ফেরি পরিষেবা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। কিন্তু উপায় নেই, সংসারের জোয়াল যে রয়েছে কাঁধে। পেট চালাতে ভাগীরথী নদী সাঁতারে পেরিয়ে প্রতিদিন নিজের কর্মস্থল ভিন জেলায় যাচ্ছেন কালনার জাপটপাড়ার যুবক। এই যাত্রায় জীবনের ঝুঁকি রয়েছে অনেক, কিন্তু তা উপেক্ষা করে এভাবেই প্রতিদিন চলছে তাঁর যাতায়াত। প্রত্যেকদিন তাঁর এই যাতায়াতে হতবাক নদীর পাড়ের বাসিন্দারা।
কালনা জাপট পাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় পালের ছোট সোনার দোকান রয়েছে নদীয়ার শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুর এলাকায়। লকডাউনের ফলে বন্ধ হয়ে যায় দোকান। তৃতীয় দফায় সোনার দোকান খোলা শুরু হয়েছে। তাই নিজেও দোকান খোলার জন্য কালনা ফেরিঘাটে গেলে জানতে পারেন, অত্যাবশ্যকীয় জিনিস ছাড়া কোনও কিছুই পারাপার হচ্ছে না। তাই তাঁকে ফেরি পারাপারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু সঞ্জয়বাবুর সংসারে বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়া স্ত্রী ও ভাই রয়েছে। প্রতিদিন সংসারের খরচও চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার লকডাউনে কোনওরকমে সংসার চালালেও তৃতীয় দফায় সোনার দোকান খোলার ইঙ্গিত মেলায় সঞ্জয়বাবু আর বাড়িতে বসে থাকেননি।

বাধ্য হয়ে কলার ভেলায় ভাগীরথী নদী পার হবেন বলে একটি ভেলা তৈরি করেন। কিন্তু নদীতে তা নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। তারপরই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গামছা পরে একটি নাইলনের ব্যাগে জামা প্যান্ট, দোকানের চাবি সহ দরকারি জিনিস ভরে একটি টিউবের সাহায্যে সাঁতারে ভাগীরথী নদী পারাপার শুরু করেন। স্রোত ঠেলে পৌঁছে যান শান্তিপুরের নৃসিংপুর পাড়ে। টিউবটি নদীর পারে পরিচিত জায়গায় রেখে ব্যাগ থেকে শুকনো জামা প্যান্ট পরে চলে যান দোকানে। এভাবেই তৃতীয় দফার লকডাউন শুরুর পর প্রতিদিন সকাল ৯ টায় বেরিয়ে পড়েন দোকান খোলার জন্য। বিকেলে আবার একইভাবে বাড়ি ফিরে আসেন।

নদীর পাড়ের বাসিন্দারা তাঁর সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে নাম রেখেছেন ‘লকডাউনের বিদ্যাসাগর’। সঞ্জয়বাবু বলেন, নৃসিংহপুরে আমার সোনার দোকান রয়েছে। দোকানের রোজগারের উপরই পুরো সংসার চলে। দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় অভাব নেমে এসেছে সংসারে। ফেরিঘাটে গিয়ে ওপারে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। অনুমতি মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টিউব নিয়ে সাঁতার কেটে প্রতিদিন আসা যাওয়া করছি।

Loading

Leave a Reply