দেশ ফিচার

“করোনা কে বড্ড ভয় করে, তার থেকেও বেশি ভয় করে পেটের জ্বালাকে”।

করোনা আতঙ্কে থর থর করে কাঁপছে আরামবাগ মহকুমার মানুষ। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আজ সন্ধ্যা সাতটা থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন আরামবাগ পৌরসভা সহ বেশ কিছু এলাকা। ইতিমধ্যেই গোঘাট 1 নম্বর ব্লকে একাধিক নেতা সহ সরকারি আধিকারিকরা আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে আরামবাগে বসেছিল লকডাউনের আগে শেষ বাজার। আর তাতেই করোনা কে উপেক্ষা করে হামলে পড়ল মানুষ। এদের মধ্যে কারো কারো মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। এই ভিড়ের মেলা দেখলে কে বলবে আরামবাগে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনা। তবে উৎসাহী ক্রেতাদের পরিষ্কার বক্তব্য যেভাবে করোনা বাড়ছে তাতে করে লকডাউন অত্যন্ত জরুরী। সত্যিই তাই। যেভাবে করোনা বাড়ছে তাতে করে লকডাউন হয়তো প্রয়োজন ছিল। ক্রেতারা ব্যাগভর্তি বাজার করে বাড়ি ফিরছেন। সংগ্রহ করছেন 7 দিনের খাবার। এতটা বাজার না করলেও হয়তো না খেয়ে কেউ মরতো না। তবুও সাeতদিনের ভুরিভোজের জোগাড় করে নিচ্ছেন সকলে। এই চিত্রের পাশেই লুকিয়ে আছে আর এক ভয়ঙ্কর কাহিনী। যা করোনার থেকেও মারাত্মক। এই বাজারে অনেক বয়স্ক মহিলা সবজি বিক্রি করেন।

আমরা একাধিক বয়স্ক সবজি বিক্রেতা মায়ের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। চিকিৎসকরা বারবার বলছেন বয়স্ক মানুষদের এই সময় সব থেকে বেশি সাবধানে থাকা উচিত। আমরা জানতে চেয়েছিলাম মা করোনা কে আপনাদের ভয় করে না? তার উত্তরে তারা বলছেন ” বড্ড ভয় করে বাবারা”, কিন্তু করোনা থেকেও আরো বেশি ভয় করে পেটের খিদেকে। একদিন বাজারে না এলে পরেরদিন উনানে হাঁড়ি চড়বেনা। তাই অরনাকে কোলবালিশ করেই পেটের জোগাড় করতে বাধ্য হয়ে বাজারে এসেছি। এ শুধু একজন বিক্রেতার কথা নয়। একাধিক বয়স্ক বিক্রেতা একই কথা বলছেন। তারা বলছেন মানুষের বাঁচার জন্য হয়তো লকডাউন দরকার ছিল, কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য লকডাউন নয় বাজার খোলা রাখাই দরকার ছিল। তারা জানেন যেভাবে আরামবাগে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে করে লকডাউন না হলে মানুষের নিস্তার নেই। কিন্তু পাশাপাশি তারা এটাও বলছেন লকডাউন হওয়ার অর্থ তাদের পেটেতে বালিশ চাপা দিয়ে বসে থাকা। এই ঘটনা থেকেই বলতে ইচ্ছা করে সত্যি বড় নিঠুর ধরিত্রী। কারো পৌষ মাস, তো কারো সর্বনাশ। কারো মন মেতেছে ভুরিভোজের আসরে আর কেউ খিদের জ্বালায় করোনা কে উপেক্ষা করে ছুটে বেড়ায় এগোলি থেকে ওগোলি। একেই বোধহয় বলে কানাগলি।

Loading

Leave a Reply